বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের নাম কি

বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের নাম কি

আমরা বাঙালি জাতি, সবসময় বাংলা ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত। তাই বাংলা ভাষা সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমাদের অনেক বেশি। আজকে আমরা বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি। তাই আপনারা মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের নাম

বাংলা ভাষাবিদদের মতে চর্চাপদ হলো বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের নাম। প্রাচীন যুগে বাংলা ভাষার একমাত্র আদি নিদর্শন চর্যাপদ কেবলমাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। আমরা জানি, চর্যা শব্দের অর্থ হল আচরণীয় এবং পদ অর্থ হল গান। অর্থাৎ চর্যাপদ মূলত কতগুলো কবিতা বা পদ বা গানের সংকলন। আনুমানিক  ৯৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দে মানুষের মুখে মুখে কতগুলো কবিতা বা গানের সংকলন থেকে চর্চাপদ  নিদর্শনটি আবিষ্কৃত হয়েছে। 

তবে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, চর্যাপদ হল একটি নির্দিষ্ট ধর্মগোষ্ঠী দ্বারা রচিত এবং একটি ধর্মগ্রন্থজাতীয় রচনা। যা বৌদ্ধ বিহারগুলোতে কিংবা অন্যত্র এগুলো নৃত্য গীত বা  ধর্মীয় গীত হিসাবে মনে করা হতো। চর্যাপদগুলো একাধিক চরণবিশিষ্ট, অন্ত্যমিলযুক্ত কবিতা এবং সুরসঙ্গের বিচারে গীত হিসাবে ধরা হত।  

পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন সম্পর্কে অনেক গবেষণা অনুসন্ধান করা হয় এবং ভাষাবিদরা ধারণা করেন যে, আশ্চর্য চর্যাচয়, চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়, চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয় এবং চর্যাগীতিকোষ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের অন্যতম অংশ।

বাংলা ভাষার আদি নিদর্শনের নাম কি

চর্যাপদ কোথায় আবিষ্কৃত হয়েছে

বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ২৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন। সময়ের ব্যবধানে বাংলা ভাষা সম্পর্কে বিভিন্ন অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। বৌদ্ধ পণ্ডিতরা তাদের ধর্মীয় নিয়ম-নীতি ও সমাজে সুষ্ঠুভাবে সমাজে বসবাস করার জন্য মানুষের মুখে ছন্দে ছন্দে চর্চাপদ ব্যবহার করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে চর্যাপদ থেকেই বাংলা ভাষার যাত্রা শুরু হয়। 

আরো দেখুন…

যুক্তিবিদ্যা জনক কে?

1 কেজি সমান কত লিটার

মনোবিজ্ঞান কি

চর্যাপদ কে আবিস্কার করেন

বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ ১৯০৭ সালে একজন  বিখ্যাত  বৌদ্ধ পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কার করেন।  ১৯১৬ সালে কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা নামে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী একটি বই প্রকাশের মাধমে চর্যাপদকে সবার সামনে তুলে ধরে।  চর্যাপদে মোট ২৩ জন কবির নাম উল্লেখ পাওয়া গেছে। এছাড়া চর্যাপদে মোট ৪৬ টি পদ রয়েছে। চর্যাপদে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অন্যতম নামটি হল কাহ্নপা।

আশাকরি আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা নিশ্চয়ই বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন। বাংলা ভাষা সম্পর্কে আপনার নতুন কোন তথ্য জানার আগ্রহ থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা আপনার কমেন্টের যথাযথ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। 

চর্যাপদ সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন কী?

উত্তরঃ বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন হল চর্যাপদ। খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত চর্যা পদাবলি ছিল সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত।

বাংলা ভাষার আবিষ্কারক কে?

উত্তরঃ বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবার থেকে 3500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে খুঁজে পাওয়া যায়। অনেকে ধারণা করেন যে এর জন্ম সংস্কৃত থেকে। কিন্তু পণ্ডিত এবং ভাষাবিদরা বিশ্বাস করেন যে এটি মাগধী প্রাকৃত এবং পালির মতো ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে এসেছে।

বাংলা ভাষার বয়স কত বছর? 

উত্তরঃ ১৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলার বিকাশ ঘটেছে। বাংলা সাহিত্য, তার সহস্রাব্দ-পুরাতন সাহিত্যের ইতিহাস সহ, বাঙালি রেনেসাঁর সময় ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিল এবং এটি এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় সাহিত্য ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম বই কোনটি?

উত্তরঃ  বাংলা ছাপার অক্ষরে মুদ্রিত বাংলা সাহিত্যের প্রথম বই – কথোপকথন (১৮০১)।

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষা কোনটি? 

উত্তরঃ ইউনেস্কোর জরিপ অনুযায়ী বাংলাকে বিশ্বের সবচেয়ে মধুর ভাষা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। একটি ভাষা হিসেবে, আসাম এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সহ সমগ্র ভারতে বাংলা ব্যাপকভাবে কথিত হয়। বিশ্বের সবচেয়ে মধুর ভাষা ভারতের সংবিধানেও স্বীকৃত।

Scroll to Top