বৈষ্ণব পদাবলী কি 

বৈষ্ণব পদাবলী কি? বৈষ্ণব পদকর্তাগণ

আপনি যদি বৈষ্ণব পদাবলী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। কারন আমাদের আর্টিকেলের মাধমে বৈষ্ণব পদাবলী কি? বৈষ্ণব পদাবলী যুগকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে? এবং বৈষ্ণব পদকর্তাগণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। 

বৈষ্ণব পদাবলী কি 

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য একটি বিস্তৃত কালপর্ব জুড়ে বিন্যস্ত। অনেকেই মনে করেন বৈষ্ণব পদাবলী বাংলা সাহিত্যের এক মহামূল্য সম্পদ। ‘বৈষ্ণব’ হল বিষ্ণু যাদের উপাস্য দেবতা, আর ‘পদাবলী’ হল পদ সমষ্টি বা গানের সমষ্টি।

প্রাক-চৈতন্যযুগে বহু কবি বৈষ্ণব ধর্মাশ্রিত পদ লিখেছেন, যেমন, বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস এবং চৈতন্য ও চৈতন্য পরবর্তী যুগে গোবিন্দদাস, জ্ঞানদাস ইত্যাদি। তবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পদাবলী চর্চার এই ইতিহাস চৈতন্যের ধর্মান্দোলনের পরই এই বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল বেশি। বৈষ্ণব পদাবলীর মূল বিষয়বস্তু হল কৃষ্ণের লীলা এবং মূলত মাধুর্যলীলা। রাধাকৃষ্ণলীলাকথাই প্রধানত পদাবলীর মূল বিষয়বস্তু। এখানে সখ্য ও বাৎসল্যরসের পদ সংখ্যায় বেশি।

বৈষ্ণব পদাবলী যুগকে কয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে

বৈষ্ণব পদাবলীকে সাধারণত তিনটি যুগ পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যেমন, 

১. আদি পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে শ্রী কৃষ্ণ ও তার অন্তর্গত সকল বিষ্ণুত্ব আচরণ করেন। এই পর্যায়ের অন্তর্গত বই হিসেবে গোপাল চামু ও ছান্দী মঙ্গল পড়া হয়।

২. মধ্য পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্গত রাধা ও তার সঙ্গীদের কথা উল্লেখ করা হয়। এই পর্যায়ের বই হিসেবে বৃন্দাবন চাঁদ্রোদয় পড়া হয়।

৩. আদ্য পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে শ্রী কৃষ্ণের অন্তর্গত মহাপ্রভু চৈতন্য মহাপ্রভুর কথা উল্লেখ করা হয়। এই পর্যায়ের বই হিসেবে শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত পড়া হয়।

বৈষ্ণব পদাবলী কি 

বৈষ্ণব পদকর্তাগণ

বৈষ্ণব কবিতার প্রধান কবি বা চার মহাকবি হচ্ছেন বিদ্যাপতি,চণ্ডীদাস,জ্ঞানদাস ও গোবিন্দদাস। কেননা বৈষ্ণব কবিতার নাম আসলেই তাঁদের নাম সামনে আসে।বাংলা সাহিতের বিকাশে বৈষ্ণব পদাবলি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তৎকালীন সময়ে বৈষ্ণব পদাবলি যারা লিখতেন সমাজে তাদেরকে অনেক সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে ধরা হতো এবং অনেকেই তাদেরকে মহাজন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। 

বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস ছাড়াও যশোরাজ খান, চাঁদকাজী, রামচন্দ্র বসু, বলরাম দাস, নরহরি দাস, বৃন্দাবন দাস, বংশীবদন, বাসুদেব, অনন্ত দাস, লোচন দাস, শেখ কবির, সৈয়দ সুলতান, হরহরি সরকার, ফতেহ পরমানন্দ, ঘনশ্যাম দাশ, গয়াস খান, আলাওল, দীন চণ্ডীদাস, চন্দ্রশেখর, হরিদাস, শিবরাম, করম আলী, পীর মুহম্মদ, হীরামনি, ভবানন্দ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য কবি।

আরো জানতে দেখুন…

 বিদ্যাপতি কে ছিলেন 

 বিদ্যাপতিকে বলা হয় বৈষ্ণব কবিতার প্রধান কবি। কারন বিদ্যাপতির কারনেই বৈষ্ণব পদাবলী কবিতা গুলো মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বিদ্যাপতি মিথিলার মধুবনী মহকুমার ‘বিসফী’ গ্রামের ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গণপতি ঠক্কর, ঠাকুর ছিল তাদের উপাধি। তিনি মিথিলার রাজসভার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। হিন্দুধর্মের পঞ্চদেবতার উপাসক ছিলেন।

বিদ্যাপতি-রচিত বিভিন্ন গ্রন্থগুলি হলো কীর্তিলতা (১৪০২-১৪০৪), ভূপরিক্রমা (১৪০০), পুরুষ পরিক্রমা (১৪১৮), কীর্তিপতাকা (১৪১৮), লিখনাবলী (১৪৩৮), শৈব সর্বস্বহার ও গঙ্গাবাক্যাবলী (১৪৩০-৪০), বিভাগসার, দানবাক্যাবলী ও দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী (১৪৪০-১৪৬০)। এই গ্রন্থগুলির বিষয় বৈচিত্র্য বিদ্যাপতির বহুমুখী পাণ্ডিত্যকে তুলে ধরেছে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করে অন্যকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করার সুযোগ করে দিবেন, ধন্যবাদ।

বৈষ্ণব পদাবলী সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

বৈষ্ণব পদাবলীর প্রথম সংকলন কোনটি?

উত্তরঃ বৈষ্ণব পদাবলীর প্রথম পদ কর্তা হলেন জয়দেব । রাধা ই প্রেম লীলা অবলম্বনে রচিত তার ” গীতগোবিন্দম ” কাব্য টি আদি বৈষ্ণব পদাবলীর নিদর্শন।

বৈষ্ণব পদাবলীর জনক কে?

উত্তরঃ বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের আদি কবি বলে বিবেচ্য। চতুর্দশ শতকের বিদ্যাপতি, চন্ডীদাশ ও ষোড়শ শতকের জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাস-কে এই সাহিত্যের চতুষ্টয় বলা হয়। বিদ্যাপতি ব্রজবুলী ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলি রচনা করেছেন ও অধিকাংশ পদাবলী এই ভাষায় রচিত হয়েছে।

বৈষ্ণব পদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি কে?

উত্তরঃ বৈষ্ণবধর্ম অনুযায়ী বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে গোবিন্দদাসের কৃতিত্ব দেখে জীব গোস্বামী তাকে ‘কবিরাজ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সেই থেকে তিনি হলেন গোবিন্দদাস কবিরাজ।

সংস্কৃত ভাষায় পদাবলীর আদি কবি কে?

উত্তরঃ বাংলা ভাষায় প্রথম পদাবলী লিখেছেন=বড়ু চন্ডীদাস। সংস্কৃত ভাষায় প্রথম পদাবলী লিখেছেন= জয়দেব।

শৈব ও বৈষ্ণবদের মধ্যে কি লড়াই হয়েছিল?

উত্তরঃ  1790 সালে বৈষ্ণব এবং শৈব সম্প্রদায়ের সাধুদের মধ্যে একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কার প্রথম পবিত্র স্নান করার অধিকার থাকবে তা নিয়ে 12,000 তপস্বীর জীবন দাবি করে।

Scroll to Top